একটা মহানুভব প্রাণের সন্ধান!
আমাদের চারপাশে অসংখ্য অগণিত মানুষ, ধনী, দরিদ্র , শিক্ষিত, অশিক্ষিত নানা শ্রেণির মানুষের বাস। এদের কার মধ্যে কী গুণ লুকাইত আছে, তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। বাইরে থেকে দেখে একটা লোককে চেনা যায় না। আজ আমি একটা মহৎ প্রাণ মানুষের কথা বলব। এলাকার চোখে সে কি রকম সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। তার অন্তরের যে দিকটা আমার নজরে এসেছে আমি শুধু সে সম্পর্কে আলোকপাত করবো।
আমার আজকের সেই লোকটি হলো আমার একজন অন্যতম স্নেহ ভাজন ছাত্র গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাই স্কুলের মাননীয় প্রধান শিক্ষক জনাব ফকীর আঃ কাদের। সে আমার গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। সে আমাদের এলাকার একটা সু-পরিচিত পরিবার ফকীর পরিবারে জনাব ফকীর আমির উদ্দিন সাহেবের তৃতীয় পুত্র, ফকীর আব্দুল কাদেরের সেঝ ভাই ফকীর আব্দুল জব্বার গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান, বর্তমান রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান। তিনি একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। এলাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। দৌলতদিয়াতে ২০১০ সালে তার নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার কলেজ ও মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার গার্লস স্কুল গড়ে তোলে। ২০১২-২০২১ সাল পর্যন্ত এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। ফকীর আঃ কাদেরের কনিষ্ঠ ভ্রাতা ফকীর আব্দুল বারেক সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের সহযোগী অধ্যাপক। সেও আমার ছাত্র। এদের এক বোন সাকী আমার ছাত্রী। ফকীর পরিবারের প্রকৌশলী ফকীর আব্দুল মান্নান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফকীর নুরুজ্জামান লাড্ডু, সামরিক কর্মকর্তা ফকীর ফারুক, ফকীর আঃ কাদেরের বড় ভাই ফকীর জালাল এর দুই ছেলে সবুজ ও রতন আমার ছাত্র। আমার আর এক ছাত্র কামরুল ইসলাম সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জনাব মোয়াজ্জেম হোসেন বাদল, কাদেরের ভগ্নিপতি কাদেরের শিক্ষাগত যোগ্যতা এম.এ এন.এড। সে বর্তমানে আইডিয়াল হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক, এফ.কে টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং এফ.কে টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ। তার ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক অবস্থাও কম নয়। ঢাকায় দুইটি ফ্লাট বাড়ি, গোয়ালন্দ আড়ৎপটিতে বাড়ী, রাজবাড়ীতে বাস মালিক সমিতি সংলগ্ন মনোরম ও দৃষ্টিনন্দন ৫ তলা ভবন! সব মিলিয়ে আজকে তার যে গৌরবজনক ও ঈশ্বনীয় অবস্থান, ঐ অবস্থানে তাকে কেউ হাত ধরে বসায় দেয় নি। কাদেরের আজ যা কিছু তা তার একান্ত নিজের প্রচেষ্টায়। ফকীর আঃ কাদের আজ সু-প্রতিষ্ঠিত ও স্ব-প্রতিষ্ঠিত।
আজ এ প্রসঙ্গে আমার এ লেখা ওর হৃদয়ের এক মহানুভবতা তুলে ধরার জন্য। আমার প্রতি ওর যে মমত্ববোধ, ভালোবাসা আর মহানুভবতার পরিচয় পেয়েছি, তাতে আমি মুগ্ধ, বিমহিত এবং গৌরবান্বিত। গৌরবান্বিত এই কারণে যে, আমার মত এক নগন্ন শিক্ষকের প্রতি ও যে মহানুভবতা দেখেছি তা তুলনাহীন। বিগত 28/05/202১ ইং তারিখ অপরাহ্ন হতে আমি অসুস্থ্য, পক্ষাঘাত গ্রন্থ রোগীতে পরিণত হয়েছি। বর্তমানে আমি আমার বাড়িতেই চিকিৎসাধীন রয়েছি। কাদের স্বস্ত্রীক আমাকে দেখতে এসেছে। আমাকে একটি সু-দর্শন একটি লাঠি কিনে দিয়েছে। আমাকে একদিন ওর নিজস্ব শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ীতে করে ডাক্তার দেখিয়ে এনেছে। ফরিদপুরে ওর ভাগনে আহাদ বোয়ালমারী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বাসায় নিয়ে গিয়ে ভুরি ভোজে আপ্যায়িত করেছে। ওর ভাগনে বউ সাথি আমাকে ৫ রকম মাছ, ২ রকম মাংস, ভাজি, লাল শাক, ডাল, ইত্যাদি নানা প্রকার খাবার দিয়ে খুবই ভালোবেসে আপ্যায়িত করেছে। অতঃপর নিজের গাড়ীতে করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। ১২/১১/২০২১ ইং তারিখে আবার আমাকে তার নিজস্ব গাড়ীতে করে রাজবাড়ী নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এনেছে। ২ বারই ডাক্তারের সম্মানির টাকা ও দিয়েছে… আমাকে দিতে দেয়নি। দুইবারই ও আমাকে পরম মমতায় হাত ধরে গাড়া থেকে নামিয়েছে। হাত ধরে ডাক্তারের কক্ষে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছে। আমি দৌলতদিয়া চরের নদী ভাঙ্গা এক কৃষক পরিবারের সন্তান। আমার জীবনের বর্তমান অবস্থানে গৌছাতে অনেকেরই সাহায্য সহযোগিতা লেগেছে। কিন্তু এটা আমি স্বপ্নেও কখনও ভাবিনী, অসুস্থ্য হয়ে আমি যখন অসহায় হয়ে পড়েছি, তখন আমার প্রাক্তন কোন ছাত্র এসে পরম মমতায় আমার পাশে এসে দাঁড়াবে। আর একটা কথা বলতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। ওর সহধর্মীনি সেলিনা আমার এক আত্মীয় মেয়ে ও আমার ছাত্রী। নাজির উদ্দিন হাই স্কুলে থাকাকালে আমি ওকে আদর করে “পাগলী” বলে ডাকতাম।আজ আমার শেষ কথা হল আমি ফকির আব্দুল কাদের ও ওর সন্তান সন্ততিকে প্রাণভরে দোয়া করি , যেন আল্লাহ ওদের রহমতের ছায়া দিয়ে ঘিরে রাখে।