স্ত্রী বিলকিস বেগমকে নিয়ে গত রোববার রাজধানী পূর্বাচলে ঘুরতে যান তার স্বামী মিজানুর রহমান ওরফে সুমন। সেখানে একটি জঙ্গলে নিয়ে তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন তিনি। এ ঘটনায় সুমনকে মঙ্গলবার (২১ মে) গাজীপুরের বাসন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (২২ মে) দুপুরে র্যাব-১–এর উত্তরার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, মিজানুর পেশায় ট্যাক্সিক্যাবচালক। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। তবে কয়েক বছর ধরে প্রথম স্ত্রী শিমু, দেড় বছরের মেয়ে, মা–সহ রাজধানীর তুরাগ থানার রানাভোলায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। এ অবস্থায় দুই বছর আগে কাউকে না জানিয়ে বিলকিস বেগমকে (২৬) বিয়ে করে রানাভোলার প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া নামক স্থানে অন্য একটি ভাড়া বাসায় রাখেন।
মিজানুরকে স্বল্প আয়ে দুটি সংসার চালাতে হতো। তিন-চার মাস ধরে বিলকিস মিজানুরের কাছে একটু বেশি টাকা দাবি করলে তাদের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়। একপর্যায়ে দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিসকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন মিজানুর। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি মাঝেমধ্যে বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যেতেন এবং সুযোগ খুঁজতেন।
র্যাবের পরিচালক বলেন, মিজানুর রোববার দুপুরের পর নিজের ট্যাক্সিক্যাবে করে বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যান। তারা পথে চা পান করেন। এ সময় মিজানুর জায়গা ও সুযোগ খুঁজতে থাকেন। বিলকিসকে বিকেল চারটার পর পূর্বাচলের ২৪ নম্বর সেক্টরের একটি জঙ্গলে নিয়ে যান মিজানুর। জায়গাটা খুবই নিরিবিলি দেখে তিনি সেখানে গাড়ি থামান। বিলকিস গাড়িতে বসে থাকেন এবং মিজানুর গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির পাইপ দিয়ে পেট্রল বের করে একটি বোতলে ঢোকান। গাড়িটির ইঞ্জিন তখনো চালু অবস্থায় ছিল। কিছুক্ষণ পর বিলকিস গাড়ি থেকে বের হন। তখন মিজানুর বিলকিসের গায়ে পেট্রল ছিটিয়ে দেশলাই জ্বালিয়ে গাড়িতে করে পালিয়ে যান। এ সময় বিলকিস চিৎকার করতে থাকেন। বিলকিসের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে দ্রুত বিলকিসকে রাজধানীর চানখাঁরপুলে অবস্থিত শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন সোমবার সকাল নয়টার দিকে বিলকিস মারা যান।
ঘটনার পর মিজানুর আত্মগোপনে চলে যান। পরে মিজানুরকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১-এর একটি দল ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং তাকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের বাসন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব-১।